প্রিন্ট এর তারিখঃ Jul 27, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Jul 21, 2025 ইং
সখীপুরে ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি ঘোষণার একদিন পরই সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের সখীপুরে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই এক বিএনপি নেতা সদ্যপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। সোমবার সকাল থেকে উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল আলীমের ওই পদত্যাগপত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পদত্যাগপত্রে তিনি দাবি করেছেন- কর্মীসভায় একজন প্রার্থী আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে এসে তাঁদের সমর্থনে সভাপতি পদ হাতিয়ে নিয়েছেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার (১৯ জুলাই) উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টার মধ্যেই ইউনিয়নের কালমেঘা উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক জড়ো হয়। মূলত দুইজন সভাপতি প্রার্থী ও দুইজন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিজেদের জনসমর্থন দেখাতে স্থানীয় কর্মী-সমর্থক ও বাসিন্দাদের জড়ো করেছিলেন।
দীর্ঘ প্রায় চার ঘন্টা নেতাদের বক্তব্যের পর সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড বিএনপির সমর্থকদের হাত তুলে সমর্থনের ভিত্তিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এতে সর্বাধিক সংখ্যক সমর্থনে বাদল মিয়া সভাপতি ও আব্দুল আলীম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়।
এ সময় বহুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আইয়ুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ মাস্টার, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুল মান্নান, বজলুর রহমান ভূঁইয়া, রফিকুল ইসলাম, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ওই সম্মেলনের একদিন না পেরুতেই রোববার (২০ জুলাই) বিকেলে সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, "আমি বাংলাদেশ জতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক। ১৯ তারিখের কর্মী সভায় একজন প্রার্থী আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে এসে সভাপতি পদ হাতিয়ে নিয়েছেন। উক্ত কমিটিতে আমাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত যে, আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যাবে না। যেহেতু আমি জাতীয়তাবাদী আদর্শের এজকন সৈনিক, সেহুতু অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগ সমর্থক দ্বারা গঠিত কমিটি মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।" -এই ঘোষণার পরপরই বিষয়টি নিয়ে উপজেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বিএনপি নেতা বলেন, জনসমর্থন বা প্রত্যক্ষ হাত তোলার ভিত্তিতে নির্বাচিত করার অনুমানে প্রার্থীরা নিজ নিজ উদ্যোগে কর্মী-সমর্থকদের হাজির করেছিলেন। ওইসব সমর্থকদের মধ্যে আওয়ামী লীগের পদধারী কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। এখন উপস্থিত জনতার মনের ভেতর বিএনপি আছে না-কি আওয়ামী লীগ আছে এটাতো জানা সম্ভব নয়। এ তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া যুক্তিসঙ্গত নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নবগঠিত কমিটির সভাপতি বাদল মিয়া বলেন, উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে এবং সমর্থকদের প্রত্যক্ষ ভোটে আমাকে সভাপতি করা হয়েছে। সেখানে অন্য কারও চোখে আওয়ামী লীগের লোকজন পড়লো না, অথচ যাঁর সাথে আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, তিনি (সাধারণ সম্পাদক) মনের দুঃখে পদত্যাগ করে বসলেন! এ বিষয়টি মানতে পারছি না। বিষয়টি সম্মেলনের সময়ই বলা উচিত ছিল।
বহুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ মাস্টার বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা হয়েছে, মেনে নিয়ে সবাই আনন্দ মিছিলও করেছে। এখানে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন কীভাবে হলো এটি বুঝতেছিনা। মূলত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন হয়েছে। নির্বাচিত সভাপতি বাদল মিয়া বিএনপির একজন পরীক্ষিত নেতা। কিন্তু আব্দুল আলীম (সাধারণ সম্পাদক) কি কারণে পদত্যাগ করলেন তা আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে আমরা উপজেলা কমিটির সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবো।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে পদত্যাগ করা বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমের মোবাইল ফোনে সকাল থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃdailyprogotiralo.com